১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ৬:৩৫
Home / অর্থনীতি ও বানিজ্য / অর্থনীতিতে বিশ্বের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম

অর্থনীতিতে বিশ্বের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর অন্যতম। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশ এগোচ্ছে। মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। চালের গড় ভোগ কমেছে। বেড়েছে মাছ মাংসের মতো খাবারের অংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি হয়েছে। মোট দারিদ্র্য এবং অতি দারিদ্র্য কমেছে। যেহেতু জনসংখ্যা বেড়েছে, সে কারণে এখনও চার কোটির মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

স্বাধীনতার পর গত ৪৬ বছরে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী বেশ কয়েকটি বছর লেগে গেছে অর্থনীতি ঠিক করতে। এরপর যেভাবে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটা খুবই উত্সাহব্যঞ্জক। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি সূচকেই ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা —এ তিনটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থার জরিপে তেমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ক্রমেই সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ায় অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

এক সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর ছিল। তবে এখন আর সে অবস্থায় নেই আমাদের অর্থনীতি। অর্থনীতির কাঠামোগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কৃষি নির্ভরতা কমেছে, অর্থনীতি এখন অনেকটাই শিল্প কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাপক প্রসার আমাদের অর্থনীতির চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। স্বাধীনতার পর মোট জাতীয় উত্পাদনে শিল্পখাতের অবদান ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমানে মোট দেশজ উত্পাদনে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। আজকের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানই একদিন বৃহত্ শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হবে। বর্তমানে অপ্রচলিত পণ্য বিদেশে রফতানির মাধ্যমে রফতানি আয় বাড়ানোর জন্য উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে গত এক দশকে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সমগ্র বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকলেও আর বেশিদিন এ অবস্থানে থাকতে হবে না। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সুপারিশ পেতে যাচ্ছে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কাউন্সিলের অধীনে আরেকটি সংস্থা দ্য কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছ থেকে। তারাই একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ব্যাপারে সুপারিশ করে থাকে। আশা করা যায়, আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ করবে। সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমরা নানা সুবিধা পেয়ে থাকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ঘটলে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তাতে রপ্তানি বাণিজ্য কমতে পারে। তবে দরকষাকষির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকরী উদ্যোগ নিলে বাণিজ্যিক ক্ষতি কমানো সম্ভব। আঙ্কটাডের অনুমান, এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। গত অর্থবছরের হিসেবে সেটি ১৫০ থেকে ২২০ কোটি ডলারের সমান হবে।

বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য এলডিসিভুক্ত না হয়েও অনেক দেশ এলডিসির সুবিধা পায়। অন্যদিকে এলডিসিভুক্ত দেশ সেসব সুবিধা পায় না। অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে হোমওয়ার্ক করতে হবে। জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে দর কষাকষি শুরু করতে হবে। কারণ আমাদের রপ্তানির বড় অংশই যায় ইউরোপে। আমাদেরকে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ঠিক একইভাবে সব জায়গায় আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পণ্য রপ্তানিতে লিড টাইম কমাতে হবে। কারণ অন্য সব দেশের চেয়ে আমাদের লিড টাইম বেশি। সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ বাড়াতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন
Share

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

চীনের সঙ্গে এমওইউ সই করেও ঋণ নিইনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের ঢাকা সফরে ২৭টি চুক্তি ও ...