১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | বিকাল ৫:২৪
Home / প্রচ্ছদ / অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনস্থ আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে চলছে মিলেমিশে অনিয়ম-হয়রানি। এই অফিসের উপ-পরিচালক থেকে শুরু করে শিক্ষা অফিসার, অফিস সহকারি, স্টেনোটাইপিস্ট এমনকি নৈশ প্রহরীও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিসহ নানা কাজে হয়রানি করছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের। দেশের চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ৩৮টি জেলা শিক্ষা অফিসে নানা অনিয়ম, হয়রানির ভয় দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এসব দপ্তরের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। একটি দায়িত্বশীল তদন্তকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান গতকাল রবিবার  বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেককে বদলি করা হয়েছে। আরো করা হবে। তথ্য অনুযায়ী, অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বদলি কোন শাস্তি হতে পারে না। বদলি চাকরির একটি অংশ। অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা এবং অভিযোগ গুরুতর হলে চাকরিচ্যুতির ব্যবস্থা আইনে থাকলেও, সে ব্যবস্থা কেনো নেওয়া হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে এমপিও কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত তিনি। অন্যায়ভাবে তিনি অনেকের এমপিওভুক্তির ফাইল আটকে রেখেছেন। কাগজপত্র ঠিক থাকা স্বত্ত্বেও হয়রানির উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইলের এক শিক্ষকের কাগজপত্রে ভুল ধরার চেষ্টা করেন এই কর্মকর্তারা। তদন্তকারী ওই সংস্থা আব্দুল খালেকের অনিয়মের সত্যতার প্রমাণ পায়। টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম এবং অফিস সহকারি আব্দুল আজিজও অনিয়মে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। নেত্রকোনা সদরের শিক্ষা অফিসার আব্দুল বাতেন শাহ সুলতান ডিগ্রী কলেজের এক শিক্ষকের কাছ অনিয়মিত সুবিধা নিয়েছেন। অথচ অন্যায্য দাবি না মানায় ওই শিক্ষকের এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেনি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। নেত্রকোনার লেঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছ অন্যায্য সুবিধা নিয়েছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দার শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াজেদ।

জামালপুরের একটি স্কুলের সহকারি গ্রন্থাগারিক তাকে এমপিওভুক্ত করতে সুবিধা দিয়েছেন ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে। এছাড়া স্টেনোটাইপিস্ট আবুল কালাম আজাদ এবং নৈশ প্রহরী নুর হোসেনকেও তিনি সুবিধা দিয়েছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

জামালপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আফরোজা বেগম, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর মোমিনুল ইসলামকে সুবিধা দিয়েছেন জামালপুরের একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক।

কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন। তদন্ত সংস্থার তথ্য মতে, এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করলেও বিভিন্ন অযুহাতে তিনি শিক্ষকদের হয়রানি করেন, অনেক ক্ষেত্রে দরখাস্ত বাতিল করেন। এখান থেকে রক্ষা পেতে আবেদনকারীদের অবৈধ সুবিধা দিতে হচ্ছে।

তদন্ত সংস্থার তথ্যমতে, একই রকম অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়ালীউল্লাহ, ফেনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন, ছাগলনাইয়ার শিক্ষা অফিসার এ কে এম আলী জিন্নাহ, পরশুরাম উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল করিম, ফুলগাজীর মো:এনামুল হক, সোনাগাজীর আল আমিন, দাগনভুয়ার দেওয়ান মো: জাহাঙ্গীর ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শিক্ষা অফিসার সভ্রত রায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শারমীন ফেরদৌস চৌধুরী এমপিওভুক্তির জন্য গোপন সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে অফিস সহকারি আজিজ ও আওয়াল। অবৈধ সুবিধার জন্য দরকষাকষি করেন।

অভিন্ন অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শিক্ষা অফিসার সামছুল কবির, তানোরের শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলাম, বোয়ালিয়ার শিক্ষা অফিসার জাহিদ হোসেন, কম্পিউটার অপারেটর উজ্জ্বল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল মুকিমের বিরুদ্ধে। রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিবের অনিয়মের সহযোগী ড্রাইভার মহব্বত। ভোলা জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রাণ গোপাল দে, চরফ্যাশন উপজেলার শিক্ষা অফিসার সামালগীর, চট্টগ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হুদা সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শ্রম, অর্থ ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্নীতি কমানোর লক্ষ্যে বিকেন্দ্রীকরণ করে অনলাইনে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমপিওভুক্তির কাজ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ প্রশাসনের ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষক হয়রানি।

পোস্টটি শেয়ার করুন
Share

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ...