১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১০:৫১
Home / মুক্তমত / দিল্লি হত্যাকান্ডে কি মোদীর লাভ…… দিল্লি হত্যাকাণ্ড কি কেজরিওয়ালের ওপর মোদীর প্রতিশোধ?

দিল্লি হত্যাকান্ডে কি মোদীর লাভ…… দিল্লি হত্যাকাণ্ড কি কেজরিওয়ালের ওপর মোদীর প্রতিশোধ?

পর্দার আড়ালে ২৪ ডটকম ডেস্কঃ জার্মানির নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের বহু লেখনিতে একটি বিষয় বারবার ফিরে এসেছে, সেটি হলো, ইতিহাস অনিবার্যভাবে বারবার ফিরে আসে। দিল্লিতে গত চার দিন ধরে চলমান সহিংসতায় গুন্টারের কথাটিও ফিরে এসেছে। দিল্লি যখন জ্বলছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন নৈশভোজে। তিনি জানেন দিল্লি জ্বলছে, মানুষ মরছে, অথচ তিনি ঘটা করে গান-বাজনা আর ভোজ করছেন।
৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট “নিরো ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জার্মানিকাস” এর সময়ে রোমে ঘটেছিল বর্বর ঘটনা। নিরোর বাহিনী গোটা রোম পুড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন বলে ইতিহাসে দাবি করা হয়। দিল্লির ঘটনায় সেই ইতিহাসই ফিরে এসেছে। তবে নিরোর ঘটনার চেয়ে দিল্লির ঘটনায় নতুন মাত্রা রয়েছে। নিরোর বেহালা বাজানোর সময় অন্য কোনো সম্রাট সেখানে ছিলেন না। কিন্তু দিল্লি পোড়ার সময় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আরেকজন সম্রাট রয়েছেন যিনি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে বেহালা বাজান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার গান-বাজনা আর নৈশভোজে দু’জন একত্রেই ছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করেই কেন এমন ঘটনা? নেপথ্যে কে বা কারা? ঘটনার উদ্দেশ্য কী? কিছু উত্তর ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। সহিংসতাকে প্রথমে দাঙ্গা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। ভারতের বহু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে বেশ নরম সুরে “হিংসা” হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিবিসি বুধবার তাদের খবরে উল্লেখ করেছে, দিল্লি সহিংসতায় বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। বেশীরভাগ ঘটনায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা হয়েছে।
বুধবার দিল্লি হাইকোর্টের এক আদেশের পর বিবিসির এই খবরে সত্য উঠে এসেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দিল্লির সংঘর্ষের জন্য ইতিমধ্যে চার বিজেপি নেতাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিডিও দেখেছেন দিল্লির আদালত। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, অভয় বার্মা ও পরবেশ বার্মা ছাড়াও যারা উস্কানি দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সংঘর্ষে উস্কানিদাতা যে চারজন শনাক্ত হয়েছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বা মোদীর দলের নেতা। সুতারাং আগুন জ্বালিয়ে নৈশভোজে থাকার ঘটনা যে নিরোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই নৃশংসতার কারণ কী? হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও দিয়ে বিজেপির অর্জন কী?
রাজনীতির কূটচাল সাধারণ চোখে ধরা পড়ে কম। ট্রাম্পের ভারত সফরে মোদী শত কোটি টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করলেন ট্রাম্প। সাদা চোখে এটি দেখা গেলেও মোদীর লাভের পাল্লাও বেশ বড়। কিছু দিন হলো দিল্লিতে নির্বাচনে মোদীর দলের ভরাডুবি হয়েছে। জনপ্রিয়তায় ধস নামা মোদী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ঘরে বাইরে বিপদে রয়েছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে বেগ পেতে হচ্ছে মোদীকে।
এই পড়ন্ত সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এনে নিজের প্রতি সমর্থন আদায় করেছেন মোদী। মুসলিম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে লড়ার অঙ্গীকার করেছে ট্রাম্প। যা কাশ্মীর ইস্যু ও ভারত থেকে মুসলিম বিতাড়নের জন্য নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন। এটি মোদীর জন্য বিরাট অর্জন। মঙ্গলবার ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর দিল্লির সহিংসতা নতুন মাত্রা নিয়েছে। এ দিন রাতে হামলা আরও তীব্র হয়েছে।
কিন্তু এ ঘটনার জন্য দিল্লিকে কেন বেছে নেয়া হলো? মাত্র দুই সপ্তাহ হলো দিল্লিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আম আদমি পার্টি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশয়ী করেছে। ৭০ টি আসনের মধ্যে ৬৩ টিতেই জিতেছে আম আদমি পার্টি। পরাজয়ের পর বিজেপির বসে থাকার কথা নয়। বিশ্লেষণ করে হয়তো তারা প্রকৃত শত্রু শনাক্ত করতে পেরেছে।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, তুলনামূলকভাবে বেশি ভোট পড়েছিল সংখ্যালঘু (মুসলিম) ভোটার বেশি আছে—এমন এলাকায়। এর মধ্যে মুস্তফাবাদ, মাটিয়ামহল ও সিলামপুরের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ৬৫ থেকে ৬৬ শতাংশ করে ভোট পড়ে। যে কারণে কেজরিওয়ালের জয় সহজ হয়। বিশ্লেষকদের ধারণা, সংখ্যালঘু মুসলিমদের এ রায় বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান।
দিল্লিতে মুসলিম সমর্থন কেজরিওয়ালের পক্ষে যাওয়াই ছিল অনিবার্য। কারণ এর কিছু দিন আগে কেজরিওয়াল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি করবে। বিভিন্ন রাজ্যে সিএএ’র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কেজরিওয়াল সিএএ আইনকে পার্লামেন্টকে বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন।
এখন লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ হচ্ছে দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। ওইসব এলাকায় মুসলিম সমর্থন হারিয়ে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপির। সাম্প্রতিক এ পরাজয়ে বিজেপির সেখানে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সহিংতার ফলে বিজেপি একক আধিপত্য বিস্তার করছে। কেজরিওয়ালের কাছে মাঠ হারানো বিজেপি এখন পূর্ণরূপে মাঠ দখলে নিয়েছে। এতে বিজেপি এক দিকে যেমন কেজরিওয়ালের ওপর প্রতিশোধের আগুন ঝাড়ছে, তেমনি মুসলিম নির্মুলে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দিল্লি পুড়লেও লাভবান হচ্ছে মোদীর বিজেপি।

পোস্টটি শেয়ার করুন
Share

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*