নাসরিন পারভীন মিমিঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দিনের পর দিন গ্রাস করে দিচ্ছে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। মৃত্যু আর লাশের মিছিলে একাকার সমগ্র পৃথিবী। বিশ্বের ১৯৫ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে প্রতিনিয়ত সাবান, হ্যান্ডওয়াশ অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে। সাধ্য অনুযায়ী মানুষ এসব পণ্য দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করছে। আর এতে করেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে কয়েকগুণ বেশি দামে। অধিক মুনাফার লাগামহীন এই বাজারে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনা ভাইরাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার প্রতিযোগিতা। চাল, ডাল আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যর লাগামহীন গতি টেনে ধরেছে প্রশাসন। কিন্তু অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীরা করোনার দোহাই দিয়ে স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য অতীব প্রয়োজনীয় ঔষধের দাম নিচ্ছেন কয়েকগুন বেশি। আর এতে করেই মাথায় হাত পড়েছে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গত রবিবার (২২) মার্চ টঙ্গীর বউবাজার এলাকায়।
ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি পর্দার আড়ালে ২৪ ডটকম প্রতিনিধিকে জানান, তিনি একটি কোম্পানীর মার্কেটিং সেলস অফিসার (এস,ও)। তিনি বলেন, আমি স্বল্প আয়ের মানুষ। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসে যখন স্থবির হয়ে পড়েছে সমগ্র পৃথিবী, গণগণ হাত ধোয়া এবং ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার জন্য হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, হেক্সিসল, স্যাভলন আর ডেটল দিয়ে হাত ধোয়া এই পরিস্থিতিতে অতীব জরুরী, আর এই কারণেই গত রবিবার (২২) মার্চ আমি টঙ্গীর বউবাজার জনৈক মোঃ আশরাফ আলম ওরফে সোহেল মাষ্টারের ফার্মেসীর দোকানে যাই একটি হ্যান্ডরাব হেক্সিসল কিনতে। ফার্মেসীর মালিক সোহেল মাষ্টার আমাকে একটি হেক্সিসল দেন এবং মূল্য হাঁকান একশত চল্লিশ টাকা। তখন আমি হেক্সিসলের গায়ে খুচরা মূল্য চল্লিশ টাকা লেখা দেখে উনাকে বলি এটার দামতো চল্লিশ টাকা, আপনি ১৪০ টাকা চাইছেন কেন?
এই কথা বলার পর সোহেল মাষ্টার বলেন, এটার দাম ১৪০ টাকাই আপনি নিলে নেন, না নিলে চলে যান। এবং আরও বলেন সবকিছুর দাম বাড়তি, চাউলের দাম বাড়তি সহ সব জিনিসের দাম বাড়তি। তখন আমি সোহেল মাষ্টারকে বলি চাউলের বাজার তো স্থিতিশীল হয়ে গেছে, এরপর উনি বলেন কোথায় স্থিতিশীল হয়েছে আপনি কোন খবর রাখেন। এই কথা বলার পর আমি নিরুপায় হয়ে ৪০ টাকার হেক্সিসল ১৪০ টাকায় কিনতেই বাধ্য হই।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষকে মুক্তি দিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আশরাফ আলম ওরফে সোহেল মাষ্টার ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার মৃত নুরুজ্জামান সরকারের পুত্র। তিনি টঙ্গীতে পরিবার নিয়ে অনেকদিন থেকেই বসবাস করে আসছেন। একসময় তিনি এলাকায় টিউশানি করতেন সেই থেকে তিনি এলাকায় সোহেল মাষ্টার নামে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে সোহেল মাষ্টার অটো রিকসার গ্যারেজের ব্যবসা করেন এবং অটো রিকসার গ্যারেজের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ঋণ দিয়ে সুধের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে সোহেল মাষ্টার কিছুদিন একটা মুদি দোকানের ব্যবসা পরিচালনা করলেও গত ২/৩ মাস আগে সোহেল মাষ্টার টংগীর বউবাজার এলাকায় আলহাজ্ব শহীদুল্লাহ মার্কেটে ফার্মেসীর দোকান দিয়ে ঔষধের ব্যবসা শুরু করেন।
পর্দার আড়ালে ২৪ ডটকম প্রতিনিধি মার্কেট মালিক মোঃ জসিম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের আতংকে যখন সবাই আতংকিত ঠিক তখনি কোন ভোক্তার কাছ থেকে পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেশি নেয়া আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
এই বিষয়ে ঐ ফার্মেসীর মালিক আশরাফ আলম ওরফে সোহেল মাষ্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি প্রায় ১ মাস ধরে তার দোকানে কোন হেক্সিসল বিক্রি করেননি।
অথচ ভুক্তভোগীর নিকট হতে পাওয়া সোহেল মাষ্টারের অতিরিক্ত দাম বেশি নেওয়ার ভিডিও পর্দার আড়ালে ২৪ ডটকমের নিকট সংরক্ষিত আছে।