মোঃ শাওন সরকার (সম্পাদক ও প্রকাশক, পর্দার আড়ালে ২৪.কম)
বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক আলোচনার বিষয় হলো নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)। ২০১৯ সালের শেষদিন মানে (৩১) শে ডিসেম্বর। রাতের আঁধার কেটে গেলেই নতুন ভোর, আর নতুন ভোর মানেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া। পুরনো বছরকে ভুলে নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা। বিশ্ববাসী সকলেই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ঠিক নতুন বছরের আগের দিন বিশ্ববাসী জানতে পারলো মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অচেনা-অজানা এক ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে যে ভাইরাসের নাম করণ করা হয় নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯।
সেই যে শুরু এরপর মাত্র সাড়ে তিনমাসের থেকে কিছুদিন বেশি দিন পার না হতেই বিশ্বের ২২০টি দেশ ও অঞ্চলে মহামারী রুপ ধারণ করে তান্ডবলীলা চালিয়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত পৃথিবীর ২২ লাখের বেশি মানুষ এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ৫২ হজারেরও বেশি মানুষ।
যেহেতু বৈশ্বিক মহামারী তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবল থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। ২০২০ সালের (৮) মার্চ বাংলাদেশে শনাক্ত হয় এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। সর্বশেষ (১৭) এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৮৩৮ জন মানুষ এবং প্রাণ হারায় ৭৫ জন।
দেশে করোনার মহামারী বিস্তার রোধে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। যেই ছুটি চলছে এখনও। চলবে (২৫) এপ্রিল পর্যন্ত। সরকার দেশের সাধারণ জনগণের কথা ভেবে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন বেশকিছু প্রণোদনা এবং জনবান্ধব কর্মসূচী। দেশের সরকার প্রধান সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন দেশের করোনার পরিস্থিতির উপর। ইতিপূর্বেই দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় শহর, জেলা, উপজেলা এবং অঞ্চলে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বন করে যার যার বাড়ীতেই অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে।
দেশে মহামারী করোনার এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও নিরলসভাবে সেবা প্রধান করে যাচ্ছে দেশের প্রশাসন। জনগণকে সচেতন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দেশের সকল প্রশাসন একজোট হয়ে নিরলসভাবে গণসচেতনতা এবং বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশের মানুষকে।
মহামারী করোনায় নিজেদের কথা না ভেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দেশের পুলিশ প্রশাসন। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের নিবেদিত প্রাণ সদস্যরা। এমনকি দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে কাজ করতে গিয়ে দেশের প্রায় ৫৮ জন পুলিশ সদস্য (১৭) এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। তবুও তারা দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মহোদয়সহ জি,এম,পির ৪/৫ জন সদস্যও দেশেও স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।
প্রশাসনের মতোই নিজেদের কথা না ভেবে, নিজেদের আপনজন ও পরিবারের কথা না ভেবে দিনরাত এক করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন দেশের চিকিৎসকেরা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে দেশের একাধিক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এমনকি প্রাণও হারিয়েছেন চিকিৎসক। তবুও তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্তদের।
প্রশাসন এবং চিকিৎসকদের মতোই দেশের গণমাধ্যামকর্মীরা বা সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবিরাম ছুটে চলেছেন দেশের মানুষের কাছে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য। এই সংবাদকর্মীদের মাধ্যামেই দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে থেকেও নিয়মিত দেশের আনাচে-কানাচের সত্য সংবাদ পাচ্ছে দেশবাসী।
দেশে করোনার মাঝেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আক্রান্ত হয়েছেন মহামারী করোনায়।
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারনে যখন দেশে আজ এক ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে ঠিক তখনও পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য প্রশাসন, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকরা নিরলসভাবে দেশকে ও দেশের মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
আমরা সকলেই মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে দু’হাত তুলে পুলিশ প্রশাসন সহ দেশের সকল প্রশাসন, চিকিৎসক,নার্স, মেডিকেল স্টাফ ও গণমাধ্যামকর্মীদের জন্য এবং সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করি মহান আল্লাহ্ পাক যেনো আমাদের সকলকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করেন এবং সকলকে সুস্থতা নসীব করেন।
পুলিশ প্রশাসন সহ দেশের সকল প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল স্টাফ ও গণমাধ্যামকর্মীরা, আপনারা ভালো থাকলেই, ভালো থাকবে বাংলাদেশ।