পর্দার আড়ালে ২৪.কম নিউজ ডেস্কঃ
করোনা ভাইরাস চীন থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকরা প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যুদ্ধে নামেন। তিন মাসের প্রচেষ্টায় অবশেষে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। নাম দেয়া হয় ‘চ্যাডক্স ১ এনকভ-১৯’। ভ্যাকসিনটির প্রি-ক্লিনিক্যাল কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট।
সারাহ গিলবার্ট বলেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে আগেও কাজ করেছি। (করোনা ভাইরাস গোত্রের) মার্স-এর প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধক কাজ করবে। ব্যক্তিগতভাবে এটি কাজ করবে বলে আমি ৮০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী। তবে অবশ্যই এটি পরীক্ষা করতে হবে আমাদের।
তিন দফায় এই ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের দেহে প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। যদি প্রথম দফার পরীক্ষা সফল হয় তবে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। চূড়ান্তভাবে তৃতীয় দফায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) অক্সফোর্ডের গবেষকদের তৈরি “চ্যাডক্স ১ এনকভ-১৯” ভ্যাকসিন প্রথমবার দুজনের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য নাম লিখিয়েছেন ৮শ স্বেচ্ছাসেবী। চূড়ান্ত পরীক্ষা সফল হলে সেপ্টেম্বরে বাজারজাত হতে পারে প্রতিষেধক।
সারাহ গিলবার্ট বলেন, এটি অব্যবহৃত, অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন। যাকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এমন প্রতিষেধক, যাতে ভাইরাসের ক্ষতিকর নিউক্লিক এসিড একটি বাহক মাইক্রোবের সাহায্যে মানুবদেহে প্রবেশ করানো হয়। দেহে ঢুকে তারা খারাপ ভাইরাসটির নিউক্লিক এসিডের সাহায্যে কিছু প্রোটিন তৈরি করে। এ প্রোটিন দেখে আমাদের শরীর মনে করে, ক্ষতিকর ভাইরাস হামলা করেছে এবং সে এন্টিবডি তৈরি করে ফেলে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা “চ্যাডক্স-১ এনকভ-১৯” কে সুপার ভ্যাকসিন বলছেন। যেখানে অন্য ভ্যাকসিনগুলোর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই কয়েকমাস সময় লাগছে, সেখানে এই ভ্যাকসিনের এতো দ্রুত অগ্রগতি অনেককে বিস্মিতও করছে। ভ্যাকসিনটি নিয়ে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশাবাদের বড় কারণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৮ বছর বয়সী সারাহ গিলবার্টের অতীতের সাফল্য। তিনি ২০১২ সালে করোনা ভাইরাস গোত্রের যে মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল, সেটির ভ্যাকসিন তৈরির পথও দেখিয়েছিলেন সারাহ সহ অক্সফোর্ডের গবেষকেরা। এমনকি ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যে ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, সেটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আনার লড়াইয়েও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ছিল অগ্রগামী। আর এতে নেতৃত্বভাগে ছিলেন সারাহ। সেই সারাহ যখন তার গবেষণার সম্ভাব্য ফলাফলের ব্যাপারে ৮০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন, তখন আশাবাদের পারদ ঊর্ধ্বমুখী না হয়ে পারে না।